বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবনীকে জুড়ে দিচ্ছেন মার্কিন প্রবাসীরা। আর সেই উদ্যোগে যেন নতুন করে প্রাণ পাচ্ছে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া ২ ব্লকের ঘোড়ানাশ গ্রামের তাঁতশিল্প। প্রত্যন্ত গ্রামে তৈরি কোটি টাকার ওয়াল হ্যাঙ্গিং পাড়ি দেবে আমেরিকা।
নিউ জার্সির প্রবাসী বাঙালিদের কাছ থেকে এসেছে কোটি টাকার অর্ডার। তৈরি হবে ১৫০ পিস জামদানি ওয়াল হ্যাঙ্গিং। প্রতি পিসের দাম প্রায় ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। গড়ে ৫০ হাজার টাকা করে ধরলে সব মিলিয়ে টাকার অঙ্ক দাঁড়াচ্ছে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা! এই ওয়াল হ্যাঙ্গিং এ থাকছে শ্রীকৃষ্ণের জীবনলীলা। সেখানে নিখুন ভাবে ফুটে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের ছবি। গ্রামের প্রায় ১০০ জন তাঁতশিল্পী দিনরাত এক করে এই কাজ করছেন।
প্রতিটি ওয়াল হ্যাঙ্গিং তৈরি করতে সময় লাগছে প্রায় তিন থেকে চার মাস। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৪০টি ওয়াল হ্যাঙ্গিং বোনা হয়েছে, অর্ডার সম্পূর্ণ হতে সময় লাগবে প্রায় দেড় বছর। তাঁতশিল্পী তথা ব্যবসায়ী রাঘবেন্দ্র সুন্দর দাস বলেন, এই অর্ডারটা এই বছর পাওয়ার জন্য আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি। এটা অনেক বেশি টাকার অর্ডার। এখানকার তাঁত শিল্পীরা এবং মহিলারাও কাজ পাচ্ছেন। তাঁতিদের ছাড়া এই কাজ করা সম্ভব নয়, তাদের তৈরি জিনিস যে বিদেশের মাটিতে যাবে এতে আমরা আরও বেশি খুশি হচ্ছি।
প্রতিটি জামদানি ওয়াল হ্যাঙ্গিং তৈরিতে তিনশ কাউন্ট খাদির মসলিন সূতো ব্যবহার করা হচ্ছে।
একসময় ঘোড়ানাশ ও মুস্থলী গ্রামের বহু তাঁতি পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে অন্য রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন। এখনও অনেকেই ভিন রাজ্যে কাজ করেন। কিন্তু প্রবাসী বাঙালিদের এই অর্ডার প্রমাণ করে দিল, গ্রামেই আছে সম্ভাবনা। গ্রামের তাঁতশিল্পী লাল্টু দত্ত বলেন, খুব পরিশ্রম হচ্ছে কিন্তু তা হলেও আমরা খুব খুশি। রাঘবেন্দ্র দাদার মাধ্যমে এই কাজ পেয়েছি এবং পূজোর আগে আমাদেরও বেশ কিছু টাকা উপার্জন হবে। আর আমাদের তৈরি জিনিস বিদেশ যাবে এতে আমাদের আরও বেশি ভাল লাগছে।
একসময় বাংলার ঐতিহ্য জামদানি হারিয়ে যেতে বসেছিল। কিন্তু এখন আবারও বিশ্ববাজারে তার চাহিদা আকাশছোঁয়া। কাটোয়ার তাঁতশিল্পীরা দিন রাত এক করে এখন ব্যস্ত রয়েছেন ওয়াল হ্যাঙ্গিং তৈরিতে। তাঁতিদের পরিশ্রমে জামদানির গায়ে যখন শ্রীকৃষ্ণের লীলা ধরা পড়ছে, তখন তা হয়ে উঠছে বাংলার ঐতিহ্য এবং শিল্পের এক অন্যতম মেলবন্ধন। সবশেষে বলাই যায় আবারও বিদেশের মাটিতে উজ্বল হবে দেশ, রাজ্য ,জেলা তথা কাটোয়ার নাম।